“ইন্টারফেইথ ডায়ালগ” একটি ব্যাধি | আল্লামাহ উবাইদ আল-জাবিরি
﷽
শাইখ উবাইদ আল-জাবিরি (রাহিমাহুল্লাহ):
আপনারা যে চিন্তাধারার (স্কুল অব থট) কথা উল্লেখ করছেন, তা হুবুহু ড. ইউসুফ আল-কারাদাওয়ির চিন্তা, যে কাতারে বসবাসরত একজন মিশরীয় ইসলামিক ডক্টর, আর দ্বীনের ক্ষেত্রে সে বিশ্বস্ত নয়। সে ফ্রিম্যাসনদের (Freemasons) সেবক; ধর্মে ধর্মে ঐক্যের প্রচার করে এবং সুদানের হাসান তুরাবির নেতৃত্বে যা পরিচালিত হয়েছিল তার দিকে দাওয়াহ দেয়। আমরা কুরআন, সুন্নাহ ও উলামাদের ইজমা (ঐকমত্য) থেকে জানি যে, মানুষ দুই প্রকারের হয়ে থাকে—এবং এতে তৃতীয় কোনো প্রকার নেই।
প্রকারগুলো হলো:
- প্রথমত, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাওয়াতের জবাব দিয়েছে, আর এরা মুসলিম;
- দ্বিতীয়ত, যারা আল্লাহর দাওয়াতের জবাব দেয়নি—এরা ইহুদি, নাসারা (খ্রিস্টান) ও হিন্দু...; আর কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার (উলামাদের ঐকমত্য) দলিল অনুসারে এরা ‘কুফফার’ (অবিশ্বাসী)।
ইহুদি ও নাসারারা ‘আহলে কিতাব’ নামেও পরিচিত, কারণ তারা আসলেই নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা শুনেছে এবং তাঁর দাওয়াতও শুনেছে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে এসেছে, তিনি বলেছেন: “শপথ সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ! কোনো ইহুদি বা নাসারা যদি আমার কথা শোনার পর আমি যা নিয়ে এসেছি তা কবুল না করে মারা যায়, তাহলে সে অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”
“ইন্টারফেইথ ডায়ালগ” একটি ব্যাধি, বিপর্যয়, ধর্মগুলোকে একীভূত করার প্রচেষ্টা, আর তা সালাফদের মানহাজের অন্তর্ভুক্ত নয়।
এটা (এই মতবাদ) তখন পর্যন্ত অজানা ছিল যতক্ষণ না মিশরে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের মাধ্যমে এর প্রকাশ ঘটে এবং পরবর্তীতে সুদান, সিরিয়া ও অন্যান্য স্থানে বিভিন্ন সংগঠনে এর শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে পড়ে। আর এই সংগঠনের মূলনীতি হলো: ‘আমরা ঐ বিষয়গুলোর ওপর ঐকমত্য পোষণ করবো যাতে আমাদের ঐক্য আছে, আর যে বিষয়ে আমাদের মতভেদ আছে তা পরিত্যাগ করবো’। তাদের এসব নীতিমালা বিদআতের (দ্বীনে নতুন সংযোজন) দ্বার উন্মুক্ত করে দেয় এবং বিদআতিদেরকে মুসলমানদের যাপিত জীবনে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দেয়—এমন যেকোনো সুযোগ তারা হাতছাড়া করে না যা তাদেরকে পথভ্রষ্ট মুসলিম দল যেমন- রাফিদাহ ও অন্যান্যদের পাশাপাশি এমনকি অমুসলিম [যেমন] ইহুদি ও নাসারাদেরও নিকটবর্তী করে। আমি পূর্বে এ বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেছি এবং ব্যাখ্যা করেছি, কীভাবে এই লোকেরা ‘আল-ওয়ালা ওয়াল বারা’ (মুসলিমদের সাথে মিত্রতা ও কুফফারদের থেকে বিচ্ছিন্নতা) পরিত্যাগ করে, যদিও এটা ইসলামের একটি মৌলিক নীতি।
নতুন এই চিন্তাধারার (ফিকির) ফলস্বরূপ, তারা মানুষকে খ্রিস্টান ও ইহুদিদেরকে ভালোবাসার প্রতি দাওয়াহ দেয়। এটি তাদের দাওয়াহগুলোর মধ্যে একটি, যা তাদের আরেকটি দাওয়াহর সাথে যুক্ত। সেটা হচ্ছে আহলুস সুন্নাহ ও আহলুর রাফিদাহ (শিয়া) সম্প্রদায়কে একত্রিত করা। আর এর সূত্রপাত করেছিল ইখওয়ানুল মুসলিমিনের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল-বান্না, যে এটা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিল। এই ব্যক্তি দাবি করেছিল যে, ‘মুসলিম ও ইহুদিদের একত্রিত করা দরকার, কারণ তাদের মধ্যকার শত্রুতা ধর্মীয় ইস্যুতে নয়, বরং আমাদের মতবিরোধ অর্থনৈতিক’। এটা মাহমুদ আব্দুল হালিম তার ‘আল-ইখওয়ানু আহদাতুন সুনআতু তারিখ’ বইতে উদ্ধৃত করেছেন।
প্রত্যেক মুসলিমের জানা উচিত, দ্বীনে দুধরনের মানুষ বিদ্যমান: যারা আল্লাহর বাণীর স্বীকৃতি দিয়েছে—এরা মুসলিম, আর যারা দেয়নি—এরা কুফফার। এবং তা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার (ঐকমত্য) দলিল দ্বারা প্রমাণিত।
... তাই যারা “ধর্মীয় ঐক্য” নামক এই ফিতনায় পতিত হয়েছে এবং এর মাধ্যমে পরীক্ষিত হয়েছে, তাদের প্রতি আমার উপদেশ হবে আল্লাহর কাছে তাওবাহ করা।
এটা স্পষ্ট যে, (আন্তরিকভাবে) ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে (আল্লাহর দিকে) দাওয়াহ দেওয়াতে কোনো সমস্যা নেই—এমনসব মাধ্যম ব্যবহার করে যা এই দ্বীনের প্রতি তাদের ভালোবাসা সৃষ্টির কারণ হবে। আমাদের উচিত তাদের কাছে ইসলামের সৎকাজগুলো সুস্পষ্ট করা, যার মধ্যে রয়েছে: দ্বীনদারিতা, ন্যায়বিচার, অত্যাচার নিষিদ্ধকরণ, সততা, নিজেদের ও প্রতিবেশীদের জন্য নিরাপত্তা ও সুরক্ষা, তাদের সম্পদ ও ব্যক্তির নিরাপত্তা এবং ইসলামের অন্যান্য সকল ইতিবাচক দিক। কারণ এটাই সঠিক ও সরল দ্বীন, এবং আল্লাহ কেবল এ দ্বীনেই সন্তুষ্ট। আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
সোর্স: SalafiTalk.net