তাওহিদের মূলনীতি – পর্ব এক: দ্বীনের ভিত্তি
﷽
অতঃপর:
সর্বোত্তম বাণী হলো আল্লাহর কিতাব, আর সর্বশ্রেষ্ঠ পথ হলো মুহাম্মাদের (ﷺ) সুন্নাহ। নিকৃষ্টতম বিষয় হলো দ্বীনে সংযোজিত নতুন বিষয়। প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত বিষয় বিদআত, প্রত্যেক বিদআত গোমরাহী, আর প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম।
প্রথম পাঠ: তাওহিদ (একত্ববাদ) দ্বীনের মৌলিক ভিত্তি
তাওহিদের গুরুত্ব এবং যারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের শাস্তি সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি করা আবশ্যক — যা কুরআনে উল্লিখিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তাওহিদের অনুসারীরাই জান্নাতের অধিবাসী। পক্ষান্তরে, মুশরিক যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাহ করে, তারা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে এবং তাদের আবাস হবে জাহান্নাম। কারণ, তাওহিদের অনুসারীরা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদাহ করে—অর্থাৎ তারা এক সত্য ইলাহের (আরবিতে: আল-ইলাহ) ইবাদাতে একনিষ্ঠ ও নিষ্ঠাবান। আল্লাহ ছাড়া তারা নবি-রাসুল, পীর-দরবেশ, নক্ষত্র, মালাইকা (ফেরেশতা), গাছপালা বা নেককার ব্যক্তি—কারো কাছেই ইবাদাতের কোনো দিক সম্পৃক্ত করে না। তারা নিজেদের ও তাদের রবের মাঝে কোনো সুপারিশকারী সাব্যস্ত করে না, বরং সরাসরি তাঁরই কাছে প্রার্থনা ও দোয়া করে — সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায়।তাওহিদের অনুসারীরা একমাত্র সত্য উপাস্য (ইলাহ), আল্লাহর ইবাদাহ করে, যেভাবে নবি ও রাসুলগণ যুগে যুগে করেছেন — যা চূড়ান্ত রূপ লাভ করে শেষ রাসুল মুহাম্মাদের (ﷺ) অনুসরণের মাধ্যমে। তাঁর প্রেরণের পর নবুয়তের দরোজা সিল করে দেওয়া হয়েছে, যাতে সকল দ্বীন তাঁর কাছে প্রেরিত ওয়াহি থেকে গ্রহণ করা হয়। পূর্ববর্তী অনেক কিতাব পুরোহিত ও রাবাইদের হাতে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল―তাই আল্লাহ শেষ নবিকে (ﷺ) ওয়াহিসহ (কুরআন ও সুন্নাহ) প্রেরণ করেন যা পূর্ববর্তী সকল প্রত্যাদেশ রহিত করে দেয়। তাই তাওহিদের অনুসারীরা শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করে, ঠিক যেভাবে রাসুল (ﷺ) করতেন। আহলুত তাওহিদ কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, দেশ, গোত্র, বর্ণ বা রঙে সীমাবদ্ধ নয়―বরং যে কেউ আল্লাহ, আযযা ওয়া জাল্লার, ইবাদাত করে, সবধরনের শির্ক পরিত্যাগ করে এবং রাসুল মুহাম্মাদের (ﷺ) অনুসরণ করে, সে-ই জান্নাতের অধিবাসী। তাওহিদের কোনো অনুসারী তাদের অন্যান্য গুনাহের কারণে শাস্তি পেতে পারে যা শির্কের চেয়ে কম গুরুতর, কিন্তু তাদের শাস্তি চিরস্থায়ী হবে না, এবং পরিশেষে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।
প্রত্যেক তাওহিদের অনুসারীকে অবশ্যই আল্লাহর একত্ববাদ ও মুহাম্মাদের রিসালাহর সাক্ষ্য দিতে হবে। তাওহিদের সাক্ষ্য হলো— “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” (আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ, মাবুদ বা উপাস্য নেই), অর্থাৎ সত্যিকার অর্থে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য, সত্তা বা বস্তুই ইবাদাতের যোগ্য নয়। এই সাক্ষ্য (শাহাদাহ) দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে:
- এক: আল্লাহ (জাল্লা ওয়া আলা) ছাড়া অন্যকিছুর ইবাদাতকে অস্বীকার। কারণ, আমাদের ইবাদাতের যোগ্য আর কেউ নেই।
- দুই: একমাত্র আল্লাহর জন্যই যথার্থ ইবাদাতের স্বীকৃতি দেওয়া। আর এই মহান শাহাদাহর মাধ্যমে খাঁটি ইবাদাহ পূর্ণতা পায়, এবং এর মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি ইসলামে প্রবেশ করে। এই সাক্ষ্যের বদৌলতে দুনিয়াতে তার জীবন, সম্পদ ও সম্মান নিরাপদ ও সুরক্ষিত হয়, আর সে আখিরাতে মুক্তি লাভ করে।
তাওহিদের এই সাক্ষ্য (বা শাহাদাহ) কবুল হওয়ার শর্ত হলো— একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই এটি দৃঢ়বিশ্বাস ও সজ্ঞানে-স্বেচ্ছায়, কোনো জবরদস্তি ছাড়াই উচ্চারণ করতে হবে। তাকে সুনিশ্চিত হতে হবে যে, সত্যিকার অর্থে তার ইবাদাতের হকদার আর কোনো উপাস্য বা সত্তা নেই। এই তাওহিদের কিছু শর্ত রয়েছে যা অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে এবং পূরণ করতে হবে, আর তা বিভিন্ন শরয়ি ইবাদাতগত আমল, তাকওয়া ও ইবাদাতের মাধ্যমে পূর্ণতা পায়।
কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে: “তোমাদের সমস্যা কী? তোমরা তাওহিদের বিষয়টিকে এতো বেশি গুরুত্ব দাও এবং এ নিয়ে সবসময় আলোচনা করো? অথচ আমরা দেখছি, এই সময়ে মুসলিমদের অন্যান্য বিষয়, যেমন: মুসলিমদেরকে মেরে ফেলা হচ্ছে, তাদের ভূমি থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে, তাদের শত্রু, অমুসলিম জাতিদের দ্বারা তারা নির্যাতিত হচ্ছে ইত্যাদি – এসবের প্রতি তোমাদের কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই।”
এক্ষেত্রে আমাদের জবাব হলো (আর হিদায়াহ আল্লাহরই পক্ষ থেকে): তাওহিদ সেই মৌলিক ভিত্তি যার ওপর এই সঠিক ও অটল দ্বীন প্রতিষ্ঠিত।
আমরা যখন কুরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি—এই বিস্ময়কর ও অসাধারণ কিতাব, যা আমরা রামাদান মাসের দিন ও রাতজুড়ে তিলাওয়াত করি—তখন দেখতে পাই, কুরআন তাওহিদের বিষয়কে পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যাখ্যা করেছে। এমনকি কুরআনের প্রতিটি সুরাই তাওহিদের আলোচনায় সমৃদ্ধ, যা হলো একমাত্র আল্লাহর ইবাদাহ এবং তাঁর নাম, গুণাবলি, ইবাদাহ ও কর্মে তাঁকে (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) এককভাবে স্বীকৃতি দেওয়া, যার হকদার একমাত্র তিনিই। কুরআন একইসাথে তাওহিদের বিপরীত সমস্ত বিষয় থেকে নিষেধ করেছে। প্রতিটি সুরাতেই তাওহিদের কিছু না কিছু উল্লেখ রয়েছে।
আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সব রাসুলদের (আলাইহিমুস সালাম) পাঠানোর উদ্দেশ্যই তাওহিদ। আল্লাহ (আযযা ওয়া জাল) নবিকে (ﷺ) বলেছেন:
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِيْۤ اِلَيْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعْبُدُوْنِ
আর তোমার পূর্বে এমন কোনো রাসুল আমি পাঠাইনি যার প্রতি আমি এই ওয়াহি নাযিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং তোমরা আমার ইবাদাত করো।’ [আল-আম্বিয়া: ২৫]আল্লাহ মানবজাতিকে জানিয়েছেন যে, প্রত্যেক নবি তাঁর অনুসারীদের বলবেন:
لَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰي قَوْمِهٖ فَقَالَ يٰقَوْمِ اعْبُدُوا اللّٰهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗ ؕ اِنِّيْۤ اَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ
আমি তো নুহকে তার কওমের নিকট প্রেরণ করেছি। অতঃপর সে বলেছে, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মহাদিনের আযাবের ভয় করছি।’ [আল-আরাফ: ৫৯]নবি মুহাম্মাদ (ﷺ) তাওহিদের পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন এবং তিনি মানুষকে আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা থেকে নিষেধ করেছেন—হোক তা ছোট কিংবা বড়ো শির্ক। আল্লাহ তাঁর নিজের ব্যাপারে বলেন:
رَّبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهِ ۚ هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا
তিনি আসমানসমূহ, জমিন ও এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে তার রব। সুতরাং তাঁর ইবাদাত করো এবং তাঁরই ইবাদাতে ধৈর্যশীল থাকো। তুমি কি তাঁর সমতুল্য কাউকে জানো? [মারিয়াম: ৬৫]
এই একটি আয়াতে তিন ধরনের তাওহিদ বিদ্যমান। প্রথম: তাঁর রুবুবিয়্যাহর তাওহিদ—যেমন তাঁর বাণী: “তিনি আসমান-জমিন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর প্রতিপালক।” দ্বিতীয়: তাঁর ইবাদাতের তাওহিদ—তাঁর বাণীতে: “অতএব, একান্তভাবে তাঁরই ইবাদাত করো এবং তাঁর ইবাদাতে অবিচল ও ধৈর্যশীল থাকো।” তৃতীয়: তাঁর নাম ও গুণাবলির তাওহিদ—যেমন তাঁর কালাম: “তুমি কি তাঁর সমতুল্য কাউকে জানো?” এটা প্রমাণ করে যে আল্লাহর এমন নাম ও গুণাবলি রয়েছে যা একান্তই তাঁর জন্য নির্দিষ্ট; আল্লাহর (আযযা ওয়া জাল) মতো আর কেউ নেই।
ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহিমাহুল্লাহ, মৃ. ৭৫২ হিজরি) তাঁর গ্রন্থ মাদারিজুস সালিকিনে (৩য় খণ্ড) কুরআন ও তাওহিদের ওপর এর গুরুত্ব সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, সমগ্র কুরআনই তাওহিদের আলোচনায় পূর্ণ। কুরআনে আল্লাহর নাম, গুণাবলি, তাঁর রুবুবিয়্যাহ (প্রভুত্ব) ও কর্ম সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে—এগুলোকে আত-তাওহিদুল ইলমি (জ্ঞানগত তাওহিদ) বলা হয়। এটি আল্লাহর একত্ববাদের সেই ইলম ও বর্ণনা যা কেবল তাঁর একক প্রভুত্ব, নাম ও গুণাবলির স্বকীয়তাকে নির্দেশ করে।
কুরআন একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের নির্দেশ দেয়—কোনো শরিক, অংশীদার বা সমকক্ষ ছাড়াই। এটি শির্ক (আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব) থেকে নিষেধ করে। এটাকেই আমল ও প্রার্থনামূলক তাওহিদ (আত-তাওহিদুল আমালি আত-তালাবি) বলা হয়। অর্থাৎ, সবধরনের ইবাদাহ একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত করা এবং সাহায্য, সহায়তা, আশ্রয়, মুক্তি ইত্যাদি কামনায় একমাত্র আল্লাহকেই ডাকা। এটাকেই আমরা তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ বলি—যা হলো এই স্বীকৃতি যে, সত্যিকার অর্থে একমাত্র আল্লাহই ইবাদাতের যোগ্য; তাঁর কোনো সমকক্ষ বা অংশীদার নেই। আমরা ইবাদাতে আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করি না। একে তাওহিদুল ইবাদাহ নামেও অভিহিত করা হয়।
কুরআন মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর আনুগত্যের নির্দেশ দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (ﷺ) অবাধ্যতা থেকে নিষেধ করে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (ﷺ) আনুগত্য করা এবং তাঁদের অবাধ্যতা পরিহার করা তাওহিদের হকের (Rights) অন্তর্ভুক্ত। তা তাওহিদের পরিপূর্ণতা এবং একজন মুমিনের তাওহিদের পূর্ণাঙ্গতার পরিচয়।
এছাড়াও, কুরআনে এমন খবর, তথ্য ও ঘটনাবলি রয়েছে যা আল্লাহর তাওহিদের অনুসারীদের (আল-মুওয়াহহিদিন)—যারা কোনো শরিক ব্যতীত একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করে—প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা বর্ণনা করে। কুরআনে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ প্রদত্ত শান্তি, সাফল্য, আনন্দ, মুক্তি ও সাহায্যের বিবরণ রয়েছে। পাশাপাশি, কুরআন আমাদেরকে এও জানায় যে মুশরিক, পৌত্তলিক ও মূর্তিপূজারীরা দুনিয়াতে শাস্তি থেকে সাধারণত অব্যাহতি পায়; কারণ তাদের জন্য আখিরাতেই শাস্তি সঞ্চিত রয়েছে। আল্লাহ তাদের জাহান্নামে চিরস্থায়ী ও অনন্ত শাস্তি দেবেন।
তাওহিদের ওপর যে আমল করে তার পুরস্কার হলো জান্নাত, শান্তি, সুখ, আনন্দ ও সম্মান—এটাই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি তাঁর একনিষ্ঠ ইবাদাতকারীদের জন্য। আর যারা তাওহিদের প্রতি উদাসীন, তাদের জন্য শাস্তি হলো এই যে আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ করবেন এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
এসব বিবেচনায় আমরা দেখতে পাই, সমগ্র কুরআন তাওহিদকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। আপনি যদি মক্কায় অবতীর্ণ সুরাগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেন—যেগুলো নবিজির (ﷺ) নবুওয়াতের প্রাথমিক পর্যায়ে (৪০ বছর বয়সে নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে ৫৩ বছর বয়স পর্যন্ত মক্কায় অবস্থানকালীন ১৩ বছর) নাযিল হয়েছিল—তাহলে দেখবেন, এই মাক্কি সুরাগুলোর সিংহভাগ আয়াতই তাওহিদের আলোচনায় সমৃদ্ধ। এগুলোতে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করার মাধ্যমে ঈমানের সংশোধন এবং আল্লাহর সাথে সাথে মূর্তিপূজা ও অন্যান্য দেবতার উপাসনায় তাঁর নিন্দা প্রাধান্য পেয়েছে।
নবি মুহাম্মাদ (ﷺ) মক্কায় তের বছর অবস্থানকালে শুধুমাত্র তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন এবং শির্ক (আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব) থেকে নিষেধ করেছেন। তো, যাকাত, রোজা (সাওম), হজ্ব, হিজাব, পোশাক-পরিচ্ছদের বিধান, মদপান ও জুয়া নিষিদ্ধকরণসহ অন্যান্য হালাল-হারামের মতো বিশাল সংখ্যক ওয়াজিবাতগুলো তখনো অবতীর্ণ হয়নি। এসব বিধি-বিধান ও আইনকানুন মদিনায় হিজরতের পর নাযিল হয়েছিল।
এর ব্যতিক্রম হলো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, যা মক্কায় মিরাজের রাতে ফরজ হয়েছিল—যখন আল্লাহর রাসুলকে (ﷺ) রাতের সফরে নিয়ে যাওয়া হয় যা ইসরা ও মিরাজ নামে পরিচিত—অর্থাৎ রাতের সফর (The night journey) ও আসমানসমূহে আরোহণ (Ascension through the heavens)। তো, সালাত হিজরতের অল্প কিছুদিন আগে ফরজ হয়েছিল। তবে শরিয়াহর অধিকাংশ বিধি-বিধান ও আইনকানুন (হুকুম-আহকাম) মদিনায় হিজরতের পরেই অবতীর্ণ হয়।
মক্কার ক্ষেত্রে, তখন মূল লক্ষ্য ছিল মুমিনদের ঈমানকে সুদৃঢ় করা, মানুষকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের দিকে আহ্বান করা এবং মানুষের ধারণকৃত মূর্তিপূজা ও অন্যান্য উপাসনাপদ্ধতির ভ্রান্তি ও অসারতা তুলে ধরা। আল্লাহ (যিনি সকল ত্রুটি থেকে মুক্ত ও সর্বোচ্চ মর্যাদাবান) এর সবই নিষিদ্ধ করেছিলেন—এবং মক্কায় এটিই ছিল মুখ্য বিষয়, অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি জোর দেওয়া। হিজরতের পর মদিনায়ও ইবাদাতের হুকুম ও আহকামের পাশাপাশি তা জারি ছিল।
এই সিরিজের আর্টিকেলগুলো মূলত আল-ইমাম ইবন আল-উসাইমিনের (রাহিমাহুল্লাহ) গ্রন্থাবলি এবং আল-আল্লামাহ সালিহ বিন ফাওযান বিন আব্দিল্লাহ আল-ফাওযানের (হাফিযাহুল্লাহ) ‘দুরুস মিনাল কুরআন আল-কারিম’ এর উপর ভিত্তি করে লেখা।
সোর্স: abukhadeejah.com
Alhamdulillah, keep on going. Actually we 've fog around us to recognise the Islam of prophet Muhammad (pbuh).
BaarakAllaahu feek.